সৌদি আরব থেকে, ১৪ মাস পর মেয়ের লাশ এল বাবার কাছে
মাঈনুদ্দিন ঢাকাঃ শারমিন আক্তারের মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছে, খবর পেয়ে রবিবার বিকেলে তার বাবা শামসুল ইসলাম দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বিকেলে তিনি তার মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন, ‘আমার মেয়ের (মৃতদেহ) গত ঈদে দেশে দেশে আসার কথা ছিল, কিন্ত তখন আসেনি, তবে এখন লাশ দেশে চলে আসছে। আমি এখন প্রথমে আমার মেয়ের কাছে যাব, তারপরে আপনাদের সাথে কথা বলব।
শারমিন আক্তার গৃহকর্মী হিসাবে সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়েছিলেন। সৌদি আরব থেকে পাঠানো মৃত্যুসনদ অনুযায়ী, শারমীনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে‘আত্মহত্যা’ লেখা। গত বছর এপ্রিলে তিনি মারা যান। শনিবার রাতে লাশ ১৪ মাস পর তার লাশ দেশে পৌঁছেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস শারমিনের পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল, মৃত্যুসনদে দেশের যে মুঠোফোন নম্বরটি দেওয়া ছিল, সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিমান কর্তৃপক্ষ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিমানবন্দরে স্থাপিত প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে এই ডেস্কের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত লাশ পৌঁছানোর খবরটি শারমীনের পরিবারকে জানানো সম্ভব হয়েছে।
শারমিনের খালাত ভাই মিলন হাসান জানান, শারমিনের মরদেহ আগে একবার দেশে আসবে বলে তাদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু তখন মরদেহ দেশে আসেনি। তবে এবার লাশ দেশে এসেছে। খবর পাওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে শারমীনের বাবাসহ, মোট পাঁচজন লাশ নিতে রওনা হন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে মিলন হাসানের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়, তিনি জানান, রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। অ্যাম্বুলেন্স পেতেও সময় লাগছে অনেক। ঢাকায় আসার পরও নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে আবার কখন বাড়ির পথে রওনা দিতে পারবেন, তা-ও তিনি বুঝতে পারছেন না।
বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক ফখরুল আলম সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জানান, শারমিনের পরিবারের সাথে যোগাযোগের সমস্যার কারণে লাশটি এখনও বিমানবন্দর ফ্রিজারে রয়েছে। শারমিনের পরিবারের সদস্যরা আসার পরে লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। কল্যাণ ডেস্ক বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে শারমীনের পরিবারকে লাশ দাফন ও পরিবহন ব্যয় বাবদ ৩৫ হাজার টাকার একটি চেক তুলে দেবেন। এরপর শারমীনের সব তথ্য চলে যাবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে’ এর কাছে। সেখান থেকে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর শারমীনের পরিবার তিন লাখ টাকার একটি চেক পাবে। কোন কর্মী বিদেশে আত্মহত্যা বা হত্যার শিকার হলে দূতাবাসের মাধ্যমেই ক্ষতিপূরণ বা আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফখরুল আলম জানালেন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক এর তথ্য মতে, প্রতিমাসে গড়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ নারী-পুরুষ কর্মীর লাশ দেশে আসে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শারমিন দুই বছর আগে সৌদি আরব চলে গিয়েছিলেন। স্বামীর সাথে তা বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছিলো। আট বছরের এক সন্তান রয়েছে। সে সন্তান শারমিনের মায়ের সাথে থাকেন। শারমিনের বাবা ও ভাই একটি ছোট ব্যবসা করেন।
বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসনের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৫০০ নারী শ্রমিকের মরদেহ দেশে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যুর কারণ ‘আত্মহত্যা’ বলে লেখা হয়েছে।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেছেন, অনেক নারীর মরদেহ শুধুমাত্র একটি আত্মহত্যার শংসাপত্র নিয়ে দেশে পাঠানো হয়। ঐ নারীরা কেন আত্মহত্যা করেছিল তা নিয়ে কখনও তদন্ত হয়নি। মৃত্যুর শংসাপত্রের উপর আত্মহত্যা লেখা থাকলেও এই মহিলার পরিবারগুলির পক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা কঠিন।
আরও পড়ুনঃ ঈদকে সামনে রেখে বেড়েছে গরু চোরের সংখ্যা
[…] সৌদি আরব থেকে, ১৪ মাস পর মেয়ের লাশ এল বা… […]